সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:২২ অপরাহ্ন
সাকিবুজ্জামান সবুর:
ঝালকাঠির কাঠালিয়ায় মাধ্যমিক পর্যায়ের বিনামুল্যে বিতরণ করা সরকারি পাঠ্যবই কেজি মুলে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বিক্রিত ৪শত ১৫ কেজি বই উদ্ধার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষ অফিসে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রæয়ারী) এ অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলার তারাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলামকে তিন কার্যদিবসের সময় দিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। বই বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার।
জানাগেছে, গত বুধবার (৩১ জানুয়ারী) বিকেল ৪টার দিকে উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের তারাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামুল্যে বিতরনকৃত পাঠ্যবই গোপনে প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বই বিক্রি করছে। খবর পেয়ে এলাকার মহল্লাদার মো. সোহেল মিয়া স্থানীয় জনতার সহায়তায় উপজেলার মরিচবুনিয়া বাজারে উত্তর পাশের্^র সড়ক থেকে (বরিশাল মেট্রো-ব ১১-০১৬০) নামের একটি ট্রাক ভর্তি বইসহ ট্রাকটি আটক করে। আটককৃত পাঠ্যবইয়ের পরিমান (৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত) প্রায় ৪শত ১৫ কেজি।
গোপনে তারাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম বই বিক্রি করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। উদ্ধারকৃত পাঠ্যবইগুলো প্রথমে পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন পরিষদে জমা রাখা হয় এবং পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে নিয়ে এসে জমা রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিশির দাস। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সুত্রে আরো জানাগেছে, উপজেলার পাটিখালঘাটা ইউনিয়নের তারাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামুল্যে বিতরণের দেওয়া হয়েছিল। ওই বই স্কুলে মজুদ রাখার বিধান থাকলেও তা না করে বুধবার বিকেলে প্রধান শিক্ষক মো. শহীদুল ইসলাম গোপনে কেজি মুলে বিক্রি করেন। বিক্রি করা বই নিয়ে যাবার সময় স্থানীয় জনতার সন্দেহ হয়। খবর পেয়ে মরিচবুনিয়া বাজারের উত্তর পাশের্^র সড়কে বইসহ ট্রাকটি আটক করে মহল্লাদার মো. সোহেল মিয়া।
এ ব্যাপারে মহল্লাদার মো. সোহেল মিয়া জানান, ২০২৩ সনের পাঠ্যবই সংরক্ষন না করে তা বিক্রি করা হচ্ছিল। খবর পেয়ে বইসহ ট্রাক আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে সংরক্ষিত রাখা হয়েছে।
আটক ট্রাকের ড্রাইভার বাগেরহাট সদরের বাসিন্ধা মো. আবদুল্লাহ জানান, এ উপজেলার তারাবুনিয়া গ্রামের মো. রুবেল হাওলাদার নামের একজন তাকে বই নিয়ে ঢাকা যাবার জন্য ভাড়া করে। তারাবুনিয়া হাই স্কুল থেকে ২০২৩ সালের ৪শ ১৫ কেজি বই কিনেছে রুবেল।
এ ব্যাপারে রুবেল হাওলাদার জানান, প্রধান শিক্ষক শহীদুল ইসলাম সরকারি বই বিক্রি করে এখন অস্বীকার করছেন। অফিস সহকারি ও দপ্তরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়ায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মো.শহীদুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি ও দপ্তরী না বুঝে পুরাতন বই ও খাতা বিক্রি করছে। বিক্রি করা বই ফেরত আনা হচ্ছে।
ইউপি চেয়ারম্যান শিশির দাস জানান, মরিচবুনিয়া এলাকার মহল্লাদার মো. সোহেল স্থানীয় লোকজন নিয়ে সরকারি বইসহ একটি ট্রাক আটক করে ইউনিয়ন পরিষদের নিয়ে আসে। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। উদ্ধারকৃত বইগুলো পরে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মু.আনোয়ার আজিম জানান, সরকারি বই বিক্রি করার কোন বিধান নেই। প্রধান শিক্ষকের বিক্রিত ৪শত ১৫কেজি বই উদ্ধার করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে এনে জমা রাখা হয়েছে। এবং উপজেলার তারাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলামকে তিন কার্যদিবসের সময় দিয়ে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নেছার উদ্দিন জানান, বিষয়টি শুনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।